বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি ২০ টি পয়েন্ট ও ১০০০+ শব্দ দিয়ে বানানো। এতে কোনো অযথা পয়েন্ট ও লাইন যোগ করা হয়নি, যা সকল পরীক্ষায় ফুল নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
এই রচনা টি পরীক্ষায় আরো বিভিন্ন নামে আসতে পারে যেমনঃ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ রচনা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ রচনা।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুতপূর্ন রচনা। প্রায়শই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রচনাটি দেওয়া হয়।
নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনার ২০ টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হলোঃ
ভূমিকাঃ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭৯ সালে সুদীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সমাপ্তি ঘটে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শোষণ আর বঞ্চনার অধ্যায়ের। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সদস্যের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম 'বাংলাদেশ' নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ঘটে।
এ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে একজন মহানায়কের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রত্যেক স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে একজন অবিসংবাদিত নেতা থাকেন। ভারতের মহাত্মা গান্ধী, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক প্রমুখ। তেমনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বীরের জাতিতে পরিণত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করে।
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। এ সময় ভারতেবর্ষে প্রধান ধর্মাবলম্বী ছিল হিন্দু আর মুসলমান। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে পাকিস্তান আর হিন্দুদের নিয়ে ভারত গঠিত হয়। বাংলাদেশ ছিল পূর্বপাকিস্তান নামে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ । অন্য প্রদেশটির নাম হয় পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।
পূর্ববাংলার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা পাকিস্তানি শাসক- গোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে থাকে এবং বৈষম্য সৃষ্টি, করে। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পূর্ব বাংলার জনগণ আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রতিবাদ গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন করার মধ্য দিয়ে "বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়।
এরপর , নির্বাচন, এ ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে পৌঁছে যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বিপুল জেট জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দিতে টালবাহানা করতে থাকে এবং ষড়যন্ত্র করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু এসব ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি বাঙালির স্বাধীনতার জন্য একটি যুদ্ধের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন এবং বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-শাসন, বঞ্চনার ইতিহাস, নির্বাচনে জয়ের পর বাঙালির সাথে প্রতারণা ও বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরেন। বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ করে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ ভাষণ এক স্মরণীয় দলিল। জাদুর স্পর্শে বাঙালি জাতিকে বীরের জাতিতে রূপান্তরিত করার এই ভাষণ বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়ে সকল স্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়। পূর্ব বাংলার সকল অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করতে। এ সময় ভুট্টোও ঢাকায় আসেন। অপরদিকে গোপন আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও গোলাবারুদ এনে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
২৫শে মার্চ রাতে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম গণহত্যা, ‘অপারেশন সার্চলাইট' শুরু হয়।ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা করে বহু মানুষকে। এ অপারেশন সার্চলাইটের নীল-নকশা করেন রাও ফরমান আলী ও টিক্কা খান।
২৫শে মার্চের কালরাত্রিতেই অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ওয়্যারলেসযোগে তা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেন। ঘোষনাটি ছিল ইংরেজিতে যাতে বিশ্ববাসী এর বিষয়বস্তু বুঝতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা শোনামাত্রই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শুরু হয় পাকিস্তানি সশস্ত্র সেনাদের সঙ্গে বাঙালি, আনসার ও নিরত্র সাধারণ মানুষের এক অসম লড়াই, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পূর্বে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাথে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল 'মুজিবনগর সরকার' গঠন করা হয়।
বাঙালি কর্মকর্তাদের নিয়ে এ সরকার প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেছিল। এতে মোট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এগুলো হলো- প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়, সাধারণ প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন ও যুব ও অভ্যর্থনা শিবির নিয়ন্ত্রণ বোর্ড।
মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর - কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, স্টকহোম প্রভৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করেন। এসব মিশন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালি অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। তাই এ যুদ্ধকে বলা হয় গণযুদ্ধ বা জনযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি করে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য পুরো দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। ৩রা ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুক্ত হয়ে যৌথভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে। যুদ্ধে পর্যুদস্ত হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নারী সক্রিয় ছিল কখনও সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনোবা যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা অসংখ্য। অজানা-অচেনা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা করেছেন বহু নারী। চরম দুঃসময়ে পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।
অনেক সময়ে শত্রুর কাছে নিজেদের সম্ভ্রম এবং প্রাণও দিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে ছুটে গিয়েছেন।
তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছেন। পাকিস্তানকে অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ না করতে বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের নিকট আবেদন করেছেন। এক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
যুদ্ধের সময়ে দেশপ্রেম জাগ্রতকরণ, মনোবল বৃদ্ধিসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ও অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। পত্রপত্রিকায় লেখা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পাঠ, দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, আবৃত্তি, নাটক, কথিকা, জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'চরমপত্র' ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদানঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নানা অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা অন্যতম।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদপত্র ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করেন। পরে এটি মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথা, রণাঙ্গনের নানা ঘটনা দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করে। এছাড়া, মুজিবনগর সরকারের প্রচার সেলের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘জয়বাংলা পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।
পেশাজীবী সাধারণ অর্থে যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তারাই হলেন পেশাজীবী। পেশাজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ি -শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রযুক্তিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদের ভূমিকা ছিল অনন্য ও গৌরবদীপ্ত।
পেশাজীবীদের বড় অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পেশাজীবীরা মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেল গঠন করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সরবরাহ, সাহায্যের আবেদন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদান, শরণার্থীদের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পেশাজীবীদের মধ্যে অনেকে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান যখন বাঙালি নিধনে তৎপর, তখন জাতিসংঘ বলতে গেলে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মৌলিক মানবাধিকার পানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে 'ভেটো' ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের বাইরে জাতিসংঘের নিজস্ব উদ্যোগে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে দাঁড়ায়। ভারত সে সময়ে এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন দেয়। তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও সে দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়।
বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গানের দল বিটস্-এর জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ - এর আয়োজন করেছিলেন। ফরাসি সাহিত্যিক আদ্রে মালরো, জাঁ পল সার্ত্রে-সহ অনেকেই তখন বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অপরিসীম। ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন প্রায় অসম্ভব ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারত সরকার বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছিল। ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছিল। ভারতের সাহায্যে মুক্তিবাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্তি দেয়। ভারতের অবদানের ফলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের এই অবদান বাংলাদেশের জনগণের জন্য চিরকাল অমূল্য হয়ে থাকবে।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়লে মিত্র বাহিনীর শ্যাম মানেকশ পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। জেনারেল নিয়াজী ১৬ ডিসেম্বর বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অর্থাৎ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে যৌথ বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরার নিকট তিনি আত্মসমর্পণ করেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ, যে দেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সর্বপ্রকার অত্যাচার, শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কিন্তু এ ভূখণ্ডের সংগ্রামী মানুষ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ডাক দেন এবং ২৬শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার যে ঘোষণা প্রদান করেন, ১৬ই ডিসেম্বর তা বাস্তবে পূর্ণতা পায়।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধ এ অঞ্চলের বাঙালি এবং এ ভূখণ্ডে বসবাসকারী অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে নতুন যে দেশপ্রেমের জন্ম দেয়, তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধ শেষে জনগণ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ক্ষুধা- দারিদ্র্য-অশিক্ষা-কুসংস্কার থেকে মুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটি দেশের – বঙ্গবন্ধু যার নাম দিয়েছিলেন 'সোনার - বাংলা'। এই সোনার বাংলা গঠনের চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নতুন প্রজন্মের কাছে এই চেতনাকে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। কেননা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এই চেতনার কোনো বিকল্প নেই।
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনদান, আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রম ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। যারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে জীবনদান করেছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতি সম্মানস্বরূপ দেওয়া হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ', 'বীরউত্তম', 'বীরবিক্রম’ ও 'বীরপ্রতীক' খেতাব।
বীর শহিদদের মধ্যে সাতজন পেয়েছেন ‘বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাব, এঁরা হলেন- সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, ন্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুল রউফ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ, সিপাহি হামিদুর রহমান, স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন ও ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। আমাদের সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে তাঁদের মৃত্যুঞ্জয় স্মৃতি ।
বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ, যে দেশ স্বশস্ত্র মুক্তিযুদের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা বজ্ঞাব যে ঘোষণা প্রদান করেন, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে তা বাস্তবে পূর্ণতা পায়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রকার সাহায্য করে যা বাঙালির শক্তিশালী জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যা বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের নিপীড়িত, স্বাধীনতাকামী মানুষদের অনুপ্রাণিত করে। ত্রিশ লক্ষ শহিদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি ভালো লেগে থাকলে এবং আপনার উপকারে আসলে কমেন্ট এ ধন্যবাদ লিখতে পারেন এবং রচনা টি শেয়ার করতে পারেন।
Detailsbd.com একটি মাল্টিনিশ বাংলা ব্লগ সাইট যেখানে মূলত ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্যবসা, টেকনোলজি, ও পড়াশোনা রিলেটেড বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়। এটি শুরু করা হয় ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে। এই সাইট টি আমার প্রথম ওয়েবসাইট তাই অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও আমি এই সাইটটিকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি। আমার লেখা কোনো আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে অথবা মন্দ লাগে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
Details you need..